ইসলামী মৌলিক নীতিমালাসহ মাসনুন সালাত ও দু"আ শিক্ষা



               ইসলাম পরিচিতি
সকল প্রকার ইবাদতের মূল ইসলাম হতে উৎসারিত। এরই উপর ভিত্তি করে আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষে ইবাদতের কার্যাবলী সম্পাদন করা হয়। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেনঃ
অর্থঃ নিশ্চয় ইসলাম হল আল্লাহ তাআলার নিকট একমাত্র মনোনীত দীন (জীবন ব্যবস্থা)। সুরা আল ইমরানঃ১৯
সার্বিকভাবে মানব জীবনের একমাত্র পরিপূর্ণ জীবন ব্যবস্থা ইসলাম। ইহা যাবতীয় সংযোজন ও বিয়োজন হতে মুক্ত। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেনঃ
অর্থঃ আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দীনকে পরিপূর্ণ করে দিলাম এবং তোমাদের প্রতি আমার নিয়ামতকে সম্পূর্ণ করে দিলাম এবং ইসলামকে তোমাদের জন্য দীন হিসেবে পছন্দ করে নিলাম। সূরা আল মায়িদাঃ৩  
আল্লাহ তাআলা বান্দার নিকট হতে নির্ভেজাল ইসলাম ব্যতীত অন্য কোন ধর্ম, মত ও পথ কবুল করবেন না। তিনি ইরশাদ করেনঃ
অর্থঃ আর যে ইসলাম ছাড়া অন্য কোন ধর্ম (জীবন বিধান) তালাশ করবে তা কখনই কবুল করা হবে না এবং সে আখিরাতে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে। সুরা আল ইমরানঃ৮৫
আব্দুল্লাহ ইবনে উমার (রা) হতে বর্ণিত, নবী (সা) বলেনঃ ইসলামের ভিত্তি পাঁচটি স্তম্ভের উপর, তা হলঃ (১)এ সাক্ষ্য প্রদান করা যে, আল্লাহ তাআলা ব্যতীত সত্যিকার কোন উপাস্য নেই, আর মুহাম্মাদ (সা) আল্লাহর রাসুল। (২)সালাত কায়েম করা (৩)যাকাত আদায় করা (৪)আল্লাহর ঘর ক্বাবায় হাজ্জ পালন করা এবং (৫)রামাযানের রোযা পালন করা। সহীহ বুখারী,সহীহ মুসলিম 




      আল্লাহ তাআলা ও রাসুলুল্লাহ (সা) এর আনুগত্য 
ইসলাম পরিচিতি জানার পর প্রশ্ন জাগে যে, ইসলামী কার্যাবলী কিভাবে সম্পাদন করব? উত্তরে আল্লাহ তাআলা বলেন,
অর্থঃ ওহে যারা ঈমান এনেছ! তোমরা আল্লাহর আনুগত্য কর এবং রাসুল (সা) এর আনুগত্য কর, আর তোমাদের আমলসমুহ বিনষ্ট করো না। (সূরা মুহাম্মাদ)  
অর্থাৎ আল্লাহ ও তার রাসুল (সা) এর আনুগত্য ছেড়ে দিয়ে অন্য কোন মাযহাব, ইমাম, পীর ও মুরব্বীদের মনগড়া পথের আনুগত্য করে তোমাদের আমলসমুহ বিনষ্ট করো না। অতএব যে ব্যক্তি মুমিন হওয়ার দাবী রাখে ইখলাসের সাথে আল্লাহর (কিতাব) ও তার রাসুল (সা) এর সহীহ হাদীসের হুবহু অনুসরণ করা তার উপর ফরয। কেননা কোন মাযহাব, ইমাম ও পীর মুরশিদের মস্তিষ্কপ্রসূত মতবাদের (তরীকার) অনুসরণ করলে কেউ পরিপূর্ণ ইমানদার হতে পারবে না। আল্লাহ তাআলা বলেনঃ
অর্থঃযদি তোমরা ইমানদার হতে চাও তাহলে আল্লাহ এবং তার রাসুলের অনুসরণ কর। (সূরা আল আনফালঃ১)

এ আয়াতে বলা হচ্ছে, আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের পূর্ণ আনুগত্য স্বীকার করাই হল ঈমান, অন্যত্রে বলা হচ্ছেঃ আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের আনুগত্য বর্জন করা প্রকাশ্য কুফরি। আল্লাহ তাআলা বলেনঃ
অর্থঃবলুন, আল্লাহ ও রাসুলের আনুগত্য কর, আর যদি তারা তা থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয় তাহলে আল্লাহ (ঐসব মুখ ফিরিয়ে নেয়া) কাফিরদেরকে ভালবাসেন না।
(সূরা আল ইমরানঃ৩২)
প্রকৃতপক্ষে আল্লাহ তাআলা ও তাঁর রাসুলের সিদ্ধান্তের পরিপন্থী ইমানদার নর নারীর জন্যে বিকল্প কোন পথ নেই, বরং বিকল্প পথটিই হল প্রকাশ্য গুমরাহী। আল্লাহ তাআলা বলেনঃ
অর্থঃআল্লাহ ও তাঁর রাসুল কোন সিদ্ধান্ত দিলে ইমানদার পুরুষ ও ইমানদার নারীর সে ক্ষেত্রে আর কোন এখতিয়ার থাকে না, আর যে আল্লাহ ও তাঁর রাসুলকে অমান্য করে সে প্রকাশ্য পথভ্রষ্টতায় লিপ্ত হয়। (সূরা আল আহযাবঃ৩৬)   
অতএব আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের সিদ্ধান্তের আলোকেই আমাদেরকে সকল বিরোধপূর্ণ বিষয় নিরসন করতে হবে। যদি আমরা প্রকৃত ইমানদার হতে চাই। আল্লাহ তাআলা বলেনঃ
অর্থঃযদি তোমরা কোন বিষয়ে বিরোধে জড়িয়ে পড়, তাহলে আল্লাহ ও রাসুলের দিকে ফিরিয়ে দাও যদি তোমরা আল্লাহ ও আখিরাতের প্রতি বিশ্বাসী হয়ে থাকে। আর এটাই কল্যাণকর এবং পরিনতির দিক দিয়ে উত্তম। (সূরা আন নিসাঃ৫৯)
এ আয়াতের শিক্ষা হলঃ আমরা যদি আল্লাহ ও পরকালের প্রতি সত্যিকার ইমানদার হই, তাহলে আমাদের মাঝে সৃষ্ট ধর্মীয় বিবাদের সমাধান কোন ঈমাম, পীর ও দরবেশের মত ও পথের মাধ্যমে না হয়ে হতে হবে একমাত্র আল্লাহর কিতাব আল কুরআন ও রাসুল (সা) এর সহীহ হাদীসের মাধ্যম। আল্লাহ আমাদের সবাইকে সে তাওফীক দান করুন। আমীন! 







        আল্লাহ তাআলা ও রাসুল (সা) এর অনুসরণে চার ইমামের মতামতঃ
                 ইমাম আবু হানীফা (রহ) বলেনঃ
 আমি যদি এমন কোন কথা বলি যা আল্লাহর কিতাব ও তাঁর রাসুল (সা) এর কথার সাথে বিরোধপূর্ণ, তাহলে আমার উক্তি দেয়ালে ছুঁড়ে মার এবং কুরআন ও সুন্নাহর নির্দেশ পালন কর। তিনি আরো বলেনঃ (আমার পর) যখন সহীহ হাদীস প্রমাণিত হবে, জেনে রাখো, সেটাই আমার মাযহাব। (মীযানে কুবরা শা’রানী)  
ইমাম মালিক (রহ) বলেনঃ আমি একজন মানুষ হিসেবে ভুলও করি এবং শুদ্ধও করি, তাই আমার রাইকে উত্তমরূপে পরীক্ষা কর,
তাঁর মধ্য থেকে যা কুরআন ও হাদীসের পরিপন্থী তা পরিত্যাগ কর। (ইকাযুক হিমাম)
ইমাম শাফি’ঈ (রহ) বলেনঃ কোন হাদীস সহীহ প্রমানিত হলে সেটাই আমার মাযহাব। তোমরা যদি আমার কোন উক্তিতে হাদীসের খেলাফ দেখতে পাও, তাহলে হাদীসের অনুসরণ কর এবং আমার উক্তিকে দেয়ালের বাইরে ফেলে দাও।     (ইকাযুক হিমাম)
ইমাম আহমদ (রহ) বলেনঃ তোমরা আমার তাকলীদ (অন্ধ অনুসরণ) করো না, আর ইমাম মালিক, শাফি’ঈ, আওযায়ী ও সুফইয়ান সাওরীর (রহ) অনুসরণ করো না, বরং তারা যেখান থেকে গ্রহন করেছেন, তোমরা সেখান থেকে গ্রহন কর। (অর্থাৎ কুরআন ও সহীহ হাদীস থেকে)। (ই’লামুল মুয়াক্কিয়ীন)   




              ঈমানের বিবরণ

ঈমান বা বিশ্বাস স্থাপন করা হল ইসলামের সর্বপ্রথম রোকন বা স্তম্ভ। রাসুলুল্লাহ (সা) কে ঈমানের পরিচয় সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি উত্তরে বলেনঃ
অর্থঃ বিশ্বাস স্থাপন করা আল্লাহর প্রতি এবং তাঁর ফেরেশতাদের, কিতাবের, রাসুলগণের ও আখিরাত বা শেষ দিবসের প্রতি, আরও বিশ্বাস স্থাপন করা ভাগ্যের ভাল ও মন্দের প্রতি। (সহীহ মুসলিম)
রাসুলুল্লাহ (সা) এর বর্ণনায় স্পষ্ট হয়ে যায় যে, ঈমানের ছয়টি রোকন। এ রোকনগুলো নিম্নে সংক্ষিপ্তভাবে আলোচনা করা হলঃ
১।আল্লাহ তা’আলার প্রতি ঈমানঃ  তিনি স্রষ্টা,প্রতিপালক, দাতা ও উপাস্য হিসেবে যেমন এক ও অদ্বিতীয়, তেমনি সুন্দরতম নাম ও মহান গুণাগুণসমূহেও এক ও অদ্বিতীয় এবং অংশীদারিত্ত হতে বহু উপরে ও পবিত্র। তিনি নিরাকার ও গুনহীন নন বরং তাঁর সত্তা ও গুণাবলী রয়েছে, তবে তা মাখলুকের সাথে তুলনাহীন, আর তিনি ব্যতীত তাঁর প্রকৃত রুপ ও ধরন সম্পর্কে কেউ অবগত নয়। ““তিনি স-সত্তায় আরশের উপর সমুন্নত””। তিনি সর্বত্র বিরাজমান নন। তবে তিনি দর্শন, শ্রবণ ও ক্ষমতায় আমাদের সাথে আছেন। আমাদের সকলকেই তাঁর দিকে ফিরে যেতে হবে।
২। ফেরেশতাদের প্রতি ঈমানঃ তারা হলেন নূরের তৈরি আল্লাহর সন্মানিত বান্দা। তাদেরকে সৃষ্টি করা হয়েছে আল্লাহর আদেশ পালনের জন্য, তারা সর্বদাই নিজ দায়িত্তে রত আছেন।
৩। আসমানী কিতাবের প্রতি ঈমানঃ আসমানী কিতাবসমুহ আল্লাহ তা’আলার বানী, যা তিনি মানুষের সঠিক পথ প্রদর্শনের জন্য নবী ও রাসুল গণের প্রতি অবতীর্ণ করেছেন। এর সঠিক সংখ্যা একমাত্র আল্লাহ তা’আলা জানেন, তবে প্রসিদ্ধ চারখানা- তাওরাত, যাবুর, ইঞ্জিল ও আল কুরআন।
৪। নবী ও রাসুলগণের প্রতি ঈমানঃ সর্বপ্রথম নবী আদম (আঃ), সর্বপ্রথম নবী ও রাসুল নূহ (আঃ)। আর সর্বশেষ নবী ও রাসুল মুহাম্মদ (সঃ) । তাঁর পরে কেউ নবুওতের দাবী করলে সে মিথ্যাবাদী ও কাফির।
৫। আখিরাতের প্রতি ঈমানঃ আখিরাত হল হিসাব নিকাশের দিবস, সেদিন মানুষের আমলসমূহের ফায়সালা হবে এবং প্রতিদান ও প্রতিফল দেয়া হবে। যেদিন কোন প্রকার বিনিময় গ্রহন করা হবে না, কারো প্রতি যুলুম ও করা হবে না। এ ফায়সালার পরই কেউ জান্নাতে, কেউ জাহান্নামে যাবে।
৬। তাকদীর বা ভাগ্যের ভাল মন্দের প্রতি ঈমানঃ যথাযথ প্রচেষ্টা ও সাধনার পর ভাগ্যে ভালো মন্দ যাই ঘটুক না কেন তাতে রাযী থাকতে হবে এবং সবুর করতে হবে। কেননা তা সবই আল্লাহর ইচ্ছাই হয়ে থাকে এবং এর প্রকৃত রহস্য একমাত্র তিনিই জানেন।




              পবিত্রতা সম্পর্কীয়
পবিত্রতা সালাতের চাবিকাঠিঃ রাসুলুল্ললাহ (সা) বলেনঃ পবিত্রতা সালাতের চাবিকাঠি। (আবু দাঊদ, তিরমিযী)
তিনি আরও বলেনঃ পবিত্রতা অর্জন না করা পর্যন্ত সালাত কবুল হবে না।
( সহীহ মুসলিম, মিশকাত)
অতএব সালাতের চাবিকাঠি ও কবুলের শর্ত হল পবত্রতা অর্জন করা। পবিত্রতা দু’প্রকার- ১। আত্মিক পবিত্রতা ও ২। শারীরিক পবিত্রতা।
১। আত্মিক পবিত্রতাঃ নিম্ন বর্ণিত কাজ সমুহ হতে মুক্ত হওয়ার মাধ্যমে আত্মিক পবিত্রতা অর্জিত হয়ে থাকে।
(ক)বিশ্বাসে সন্দিহান থাকাঃ বিশ্বাসের ক্ষেত্রে মতদন্দ এবং নিজের প্রতি পরিপূর্ণ আস্থা না থাকা, যেমন- আল্লাহর বিশ্বাসে সন্দিহান হওয়া বা ইসলামের মূল বিষয়সমুহ এর ব্যাপারে সন্দেহান পোষণ করা। এর বিপরীত হল আস্থার সাথে বিশ্বাস স্থাপন করা।
(খ) মুনাফিকীঃ বাহ্যিকভাবে ঈমান প্রকাশ করা আর অন্তরে কুফরি খেয়াল রাখা।
(গ) শিরকঃ আল্লাহ ছাড়া অন্যের ইবাদত করা, আল্লাহ যে সমস্ত বিশেষ গুনের অধিকারী সে ক্ষেত্রে তাঁর সমপর্যায় কাউকে মনে করা। অথবা মৃত ব্যক্তির নিকট দু’আ করা, অন্য কারো উদ্দেশে কুরবানী করা, কোন কিছু মানত করা ইত্যাদি।
(ঘ) রিয়া বা লোক দেখানো ও শুনানোর উদ্দেশে ইবাদতঃ মানুষের প্রশংসা লাভের আশায় কোন ইবাদত করা, অথবা মানুষের ধিক্কারের ভয়ে কোন ইবাদত ত্যাগ করা, এসবই ছোট শিরকের অন্তর্ভুক্ত।
(৫) অহংকারঃ গোঁড়ামিবশতঃ সত্যকে গ্রহন না করা এবং মানুষকে হেয় প্রতিপন্ন করা ও নিজেকে বড় মনে করা।
(চ)হিংসা করাঃ যা করা ইসলামে হারাম।
(ছ) হিকদঃ অর্থাৎ সদা সর্বদা মু’মিন-মুসলিমের সাথে শত্রুতা মুলক ব্যবহার করা এবং তাদের অকল্যাণ কামনা করা।
(জ)কৃপণতাঃ যা ইবাদতে বিভিন্ন ভাবে প্রকাশ পায়।
(ঝ) বিদ’আতী ও কুফরি আকীদা বিশ্বাসঃ যেমন বিশ্বাস করা যে, আল্লাহ স্ব-স্বত্বায় সর্বত্র বিরাজমান, তিনি নিরাকার, মুহাম্মাদ (সা) নূরের তৈরী, তিনি গায়েব জানেন। এইসব ই কুরআন ও সহীহ হাদীস পরিপন্থী বিশ্বাস যা হারাম।
তাই বলা যায় যে, এসব কাজ থেকে আমাদেরকে মুক্ত থাকতে হবে।
২। শারীরিক পবিত্রতাঃ যে সকল নাপাকী হতে শারীরিক পবিত্রতা অর্জন করতে হয় তা দু’প্রকারঃ
(ক) ছোট নাপাকী- যার কারণে ওযু করা ফরয।
(খ) বড় নাপাকী-যার কারণে গোসল করা ফরয হয়। আর ওযু ও গোসল উভয়ের অপারগতায় তায়াম্মুম করা ফরয।   



http://int-bd.blogspot.com




               প্রসাব পায়খানার নিয়মাবলী
প্রসাব-পায়খানা ছোট নাপাকীর অন্তর্ভুক্ত। এর নিয়ম সম্পর্কে রাসুল্লুলাহ (স) বলেনঃ যখন তোমাদের কেউ প্রসাব-পায়খানায় যাবে তখন সে যেন কিবলার দিকে মুখ ও পিঠ ফিরিয়ে না বসে। অতঃপর পানির অবর্তমানে তিনি রাসুল্লুল্লাহ (স) ইস্তিঞ্জার জন্য সর্বনিম্ন ৩টি পাথর নেয়ার নির্দেশ দেন এবং গোবর বা হাড় (অন্য বর্ণনায় কয়লা) দিয়ে কুলুখ নিতে নিষেধ করেন। আর ডান হাত দিয়ে প্রসাব-পায়খানার অংগ ধুতে নিষেধ করেন। (সহীহ মুসলিম)
কিবলাকে সামনে বা পেছনে রেখে প্রসাব পায়খানা করা নিষেধ। (সহীহ বুখারী,মুসলিম)
প্রসাব পায়খানায় যাওয়ার সময় আগেই কাপর তোলা বা খোলা নিষেধ এবং পায়খানার জন্য কেউ দেখবে না এমন জায়গা নির্ধারণ করতে হবে।
(তিরমিযী, আবু দাঊদ)
গোসলখানায়, গর্তে, নদী বা পুকুর ঘাটে, পথের মাঝখানে ও গাছের ছায়াতে প্রসাব-পায়খানা করা নিষেধ। (আবু দাঊদ)
প্রসাব-পায়খানার প্রবেশে প্রথমে বাম পা ও ফেরার সময় প্রথমে ডান পা রাখা, পায়খানার সময় বাম পায়ে ভর দিয়ে বসা, পায়খানা শেষে হাত মাটিতে ঘষে ধৌত করা হাদীসে প্রমানিত (মাটি না পেলে সাবান দিয়ে ধোয়া)।
প্রসাবের পর জোরে কাশি দেয়া, কুলুখ নিয়ে উঠা বসা করা, গুপ্তাংগে হাত রেখে পায়চারি করা ইত্যাদি বাড়াবাড়ি ও বিদ’আত এবং লজ্জাহীনতার কাজ, যার কোন সঠিক প্রমান রাসুলুল্লাহ (স) ও সাহাবীদের থেকে নেই।
আর এই বিদ’আতের ব্যাপারে আল্লাহর রাসুল (স) কঠোর সতর্কবাণী উচ্চারণ করেছেন। তিনি বলেনঃ যে ব্যক্তি দ্বীনই কাজের উপর অন্য কোন কাজ আবিষ্কার করল তা হবে অগ্রাহ্য। ( আবু দাঊদ)
তিনি আরও বলেনঃ সাবধান, তোমরা দ্বীনে নতুন কোন (ইবাদত) কিছু করা হতে বিরত থাকবে, কেননা এতে প্রত্যেক নতুন কিছু করার নামই বিদ’আত। আর প্রত্যেক বিদআতই গোমরাহি। আর প্রত্যেক গোমরাহি হবে জাহান্নামী। ( আবু দাঊদ)



         প্রসাব-পায়খানায় যাওয়ার সময় দু’আ  
রাসুলুল্লাহ (স) হতে প্রমাণিত, তিনি প্রসাব পায়খানায় যেতে এ দু’আ পড়তেনঃ
উচ্চারণঃ বিসমিল্লা-হি আল্লা-হুম্মা ইন্নী আ’ঊযুবিকা মিনাল খুবুসি ওয়াল খাবা-ইস।
অর্থঃ আল্লাহর নামে বলছি, হে আল্লাহ! আমি দুষ্ট জিন পরীর অনিষ্ট হতে তোমার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি। (সহীহ বুখারী, সহীহ মুসলিম)
      প্রসাব-পায়খানা হতে ফিরার সময় দু’আ
রাসুলুল্লাহ (স) যখন প্রসাব পায়খানা হতে ফিরতেন তখন এ দু’আ পড়তেনঃ
উচ্চারণঃ গুফরা-নাকা।
অর্থঃ হে আল্লাহ! আমি তোমার নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করছি। (আহমাদ)  
               অযুর ফযীলাত ও গুরুত্ব
ওযু উম্মাতে মুহাম্মাদীয়ার জন্য এক বড় বৈশিষ্ট্যপূর্ণ নিয়ামত। কিয়ামতের দিন অন্যান্য উম্মাতের মধ্যে মুহাম্মাদী উম্মাতের জন্য বিশেষ প্রতীক, তাদের অযুর অঙ্গ প্রত্যঙ্গগুলো আলো হয়ে চমকাতে থাকবে। যা অন্য কোন উম্মাতের ভাগ্যে জুটবে না। রাসুলুল্লাহ (স) বলেনঃ যখন কোন মুমিন ব্যক্তি অযুর সময় তার মুখমণ্ডল ধৌত করে, তখন দু’চক্ষু দ্বারা যত গুনাহ হয় সবই পানির বিন্দুর সাথে ঝরে যায়। তারপর যখন দু’হাত ধৌত করে তখন হাতের দ্বারা ক্রিত গুনাহগুলো পানির সাথে ঝরে যায়। অতঃপর যখন দু’পা ধৌত করে তখন পায়ের দ্বারা ক্রিত গুনাহগুলো পানির বিন্দুর সাথে ঝরে যায়, এভাবে অযুর মাধ্যমে সে গুনাহসমুহ হতে নিষ্কলুষ হয়ে যায়। (সহীহ বুখারী, সহীহ মুসলিম)
তিনি আরও বলেনঃ অযুহীন ব্যক্তি যতক্ষণ না ওযু করে ততক্ষণ পর্যন্ত তার সালাত কবুল হয় না। (সহীহ মুসলিম, মিশকাত)




      ওযু করার নিয়মাবলী ক্রমান্বয়ে আলোচনা করা হল
মিসওয়াকের বিবরণঃ রাসুলুল্লাহ (স) বলেনঃ মিসওয়াক মুখ পবিত্রকারী ও প্রভুর সন্তুষ্ট বিধানকারী। (সহীহ বুখারী)
রাসুলুল্লাহ (স) আরও বলেনঃ যদি আমি আমার উম্মাতের উপর কষ্টকর মনে না করতাম, তাহলে প্রত্যেক অযুর সাথে মিসওয়াক করার হুকুম দিতাম। (নাসায়ী)
প্রত্যেক নামাযের সময়ও মিসওয়াক করা সুন্নাত। (সহীহ বুখারী)
রোযা রাখা অবস্থায় সব সময় মিসওয়াক করা যায়।
নিয়্যাত করার বিবরণঃ নিয়্যাত প্রসঙ্গে নবী (স) বলেনঃ প্রত্যেক আমলের ফলাফল নিয়্যাতের উপর নির্ভরশীল। (সহীহ বুখারী)
ওযু একটি আমল, সুতরাং অযুর পূর্বে নিয়্যাত করা প্রয়োজন। নিয়্যাত হল অন্তরে দৃঢ় সংকল্প করা, শব্দের সাথে এর কোন সম্পর্ক নেই। কিন্তু আমাদের মধ্যে যারা গদবাধা শব্দ পাঠ করে নিয়্যাত করে থাকে, এটা সুন্নাত সম্মত নয় বরং বিদ’আত। কারন রাসুলুল্লাহ (স) ও সাহাবীদের থেকে এর কোন প্রমান নেই। ইমাম আবু হানিফা (রহ) বলেন, মুখে নিয়্যাত পড়া বিদ’আত। ( ফাতহুল কাদীর)
                   অযুর নিয়মাবলী
রাসুলুল্লাহ (স) এর ওযু সম্পর্কিত সমস্ত হাদীস একত্রিত করলে অযুর নিয়নাবলী প্রতীয়মান হয় নিম্নরূপঃ রাসুলুল্লাহ (স) ওযু করার সময় প্রথমে ‘বিসমিল্লাহ’ পরতেন। (সহীহ তিরমিযী)
তারপর দু’হাত কবজি পর্যন্ত ৩ বার ধৌত করতেন। (সহীহ বুখারী, সহীহ মুসলিম)
হাত ধোয়ার সময় তিনি এক হাতের আঙ্গুল অন্য হাতের আঙ্গুলের মধ্যে ভরে দিয়ে খেলাল করতেন। (আবু দাঊদ, তিরমিযী)
তারপর ৩ বার কুলি করতেন এবং ৩ বার নাকে পানি দিয়ে নাক ঝেড়ে ভাল করে সাফ করতেন। তারপর (মাথার সম্মুখের চুলের গোঁড়া হতে দুই কানের পার্শ্ব দিয়ে থুতনির নীচ পর্যন্ত) সমস্ত মুখমণ্ডল ৩ বার ধৌত করতেন। (সহীহ বুখারী, সহীহ মুসলিম)
এ সময় দাড়ির ভিতরে পানি দিয়ে খেলাল করতেন। (আবু দাঊদ, তিরমিযী)
তারপর দু’হাত কনুই পর্যন্ত ৩ বার ধৌত করতেন। তারপর দু’হাত ভিজিয়ে মাথা মাসাহ করতেন। এ মাসাহের সময় রাসুলুল্লাহ (স) হাতের তালুসহ আঙ্গুল ভিজিয়ে নিয়ে উভয় হাত কপালের দু’পার্শে রেখে মাথার উপর দিয়ে পিছন পর্যন্ত নিয়ে যেতেন, আবার পিছন হতে উভয় হাত টেনে ঐ একই স্থানে নিয়ে যেতেন যেখান হতে আরম্ভ করেছিলেন। (সহীহ বুখারী, সহীহ মুসলিম)
মাথায় পাগড়ী থাকলে তার উপর মাসাহ করতেন। (সহীহ মুসলিম, মিশকাত)
এবং দুই শাহাদাত আঙ্গুল দ্বারা দুই কানের ভিতর অংশ ও দুই বুড়া আঙ্গুল দ্বারা বাইরের অংশ মাসাহ করতেন। মাথা ও কান একবার মাসাহ করতেন। (নাসায়ী)
তারপর যথাক্রমে ডান পা ও বাম পা গিরা গিরা পর্যন্ত ৩ বার ধৌত করতেন।
(সহীহ বুখারী, সহীহ মুসলিম)
পা ধোয়ার সময় হাতের আঙ্গুল দ্বারা পায়ের আঙ্গুলগুলো খেলাল করতেন। (তিরমিযী)
ওযু শেষে তিনি একটু পানি নিয়ে গুপ্তাংগ বরাবর কাপড়ের উপর ছিটিয়ে দিতেন।
(মিশকাত, আবু দাঊদ)
কেননা শয়তান মানুষকে ওয়াস-ওয়াসা দেয় যে, তোমার প্রসাবের কনিকা বের হয়েছে। মনে এমনভাব উদয় হলে মুসল্লী তার মনের খারাপ চিন্তা দূর করবে এই ভেবে যে, ঐ স্থানে পানি দেয়ায় সিক্ত হয়েছে, প্রসাবের কারণে নয়।

              ঘাড় মাসাহ করা বিদ’আত
দু’হাতের পিঠ দ্বারা ঘাড় মাসাহ করার বিধান সহীহ হাদীসে পাওয়া যায় না। এ ব্যাপারে একটি হাদীস পাওয়া যায়, কিন্তু ইমাম নববী (রহ) বলেনঃ হাদিসটি জাল। এটি রাসুলুল্লাহ (স) এর কথা নয়, তাই এটি সুন্নাত নয় বরং বিদ’আত। এ ব্যাপারে ইমাম ইবনুল কাইয়্যিম (রহ) বলেন যে, ঘাড় মাসাহ করার ব্যাপারে রাসুল (স) হতে কোন সহীহ হাদীস প্রমাণিত নেই।
               অযুর পরে দু’আর বিবরণ
সাহাবী উমার (রা) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (স) বলেনঃ তোমাদের মধ্যে যখন কেউ ভাল করে ওযু করবে, তারপর নীচের দু’আটি পাঠ করবে- তার জন্য জান্নাতের ৮টি দরজা খুলে দেওয়া হবে, সে যেটা দিয়ে ইচ্ছা জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে। (সহীহ মুসলিম, মিশকাত)  
উচ্চারণঃ আশহাদু আল্লা-ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু ওয়াহদাহু লা-শারীকালাহু ওয়াশহাদু আন্না মুহাম্মাদান আব্দুহু ওয়া রাসুলুহ।
অর্থঃ আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া সত্যিকার কোন মা’বুদ নেই। তিনি এক, তার কোন শরীক নেই। আমি আরও সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মাদ (স) তার বান্দা ও রাসুল।
এ দু’আর সাথে তিরমিযী শরীফের বর্ণনায় আরও একটি দু’আ পাওয়া যায়, তা হলঃ
উচ্চারণঃ আল্লা-হুম্মাজ আলনী মিনাত তাওয়া-বীনা ওয়াজ আলনী মিনাল মিতাতাহিরীন।
অর্থঃ হে আল্লাহ! তুমি আমাকে অধিক তাওবাকারী এবং পাক পবিত্র লোকদের অন্তর্ভুক্ত করে দাও। (সহীহ তিরমিযী)
             অযুর কতিপয় জরুরী মাসালাহ
১। অযুর অঙ্গগুলো ৩ বার করে ধোয়া সুন্নাত।
২। অযুর জায়গা নখ পরিমাণ শুকনো থাকলে ওযু হবে না। (আবু দাঊদ)
৩। অযুর জায়গাটিতে কাপড় বাঁধা থাকলে কিংবা সে স্থানে পানি লাগালে ক্ষতির আশংখা হলে ভিজা হাতে মাসাহ করতে হবে।
৪। রাসুলুলাহ (স) অযুর পাত্রে পাক পবিত্র হাত ডুবিয়ে ওযু করতেন।
(সহীহ বুখারী, সহীহ মুসলিম, মিশকাত)
৫। অযুর সময় প্রয়োজনীয় কথা বলতে ও সালাম দেয়া নেয়ার হাদীসে কোন নিষেধ নেই।
                   ওযু ভঙ্গের কারণসমূহ
সহীহ হাদীসে প্রমাণিত ওযু ভঙ্গের কারণ সমূহ নিম্নরূপঃ ১। মল মুত্রের দ্বার দিয়ে কোন কিছু বের হলে ২। শোয়া অবস্থায় গভীর ঘুম গেলে ৩। যে সব কাজ করলে গোসল ফরয হয় তা ঘটলে ৪। উটের গোস্ত খেলে ৫। পর্দাহীন অবস্থায় গুপ্তাংগে হাত লাগালে ৬। জ্ঞান হারা হয়ে গেলে ৭। বীর্যের পূর্বে তরল আঠা জাতীয় বের হলে ৮। মেয়েদের হায়েয, নিফাস শুরু হলে। (সহীহ বুখারী, সহীহ মুসলিম, মিশকাত)



           যে সব কারণে ওযু ভঙ্গ হয় না
শরীরের যে কোন ক্ষতস্থান হতে কম হোক বা বেশী হোক রক্ত বের হলে ওযু নষ্ট হবে না। (সহীহ বুখারী)
বমী হলে বা নামাযে বা নামাযের বাইরে উচ্চস্বরে হাসলে, মৃত ব্যক্তিকে গোসল দিলে বা বহন করলে ইত্যাদি কারণে ওযু নষ্ট হবে না। তবে ওযু করা মুস্তাহাব।
            মোজার উপর মাসাহ করার বিবরণ
রাসুলুল্লাহ (স) ও সাহাবায়ে কিরামগন খুফ (চামড়ার তৈরী মোজা) ও জাওরাবের (সুতী বা পশমী মোজার) উপর মাসাহ করতেন। (আবু দাঊদ, তিরমিযী)
গৃহে অবস্থান কালে ২৪ ঘণ্টা এবং প্রবাসে (সফরে) ৩ দিন ও ৩ রাত মোজা না খুলে তার উপর মাসাহ করা চলবে। (সহীহ মুসলিম, মিশকাত)
তবে শর্ত হল, ওযু অবস্থায় মোজা পরিধান করতে হবে।(সহীহ বুখারী, সহীহ মুসলিম)
মাসাহ করার নিয়মঃ দু’হাত পানিতে ভিজিয়ে ডান হাত পায়ের সম্মুখ ভাগে (আঙ্গুলের উপর) রেখে এবং বাম হাত পায়ের পিছনে গোড়ালির উপর রেখে উভয় হাত পায়ের গিরার উপর পর্যন্ত টেনে নিয়ে আসতে হবে। এভাবে উভয় পা মাত্র ১ বার (মাসাহ করতে হবে)।যে সমস্ত কারণে ওযু নষ্ট হয় ও গোসল ফরয হয় তা ঘটলে অথবা মোজা খুলে গেলে মোজার উপর মাসাহ নষ্ট হয়ে যায়। আর নির্দিষ্ট সময় পূর্ণ হয়ে গেলেও পুনরায় মোজা খুলে ওযু করে মোজা পরিধান করতে হবে।
                যে কারণে গোসল ফরয হয়
যে সব কারণে গোসল ফরয হয় তা নিম্মরুপঃ ১। নারীপুরুষের মিলন হলে ২। স্বপ্নদোষে বীর্যপাত হলে ৩। মেয়েদের হায়িয ও নিফাস শেষ হলে ৪। উত্তেজনা বশতঃ বীর্যপাত হলে ৫। ইসলাম গ্রহন করলে।




       ফরয গোসল করার পদ্ধতি
প্রথমে দু’হাত কবজি পর্যন্ত ৩ বার ধৌত করতে হবে। তারপর ডান হাতে পানি নিয়ে বাম হাত দিয়ে লজ্জাস্থান ও তার আশপাশে ভালভাবে ধুয়ে পরিষ্কার করে নিয়ে বাম হাত মাটিতে (বা সাবানে) ভাল করে ঘষে ধৌত করতে হবে। অতঃপর দু’পা ব্যতীত নামাযের অযুর ন্যায় ওযু করে মাথায় তিন আঁজল পানি দিতে হবে। অতঃপর সমস্ত শরীর প্রথমে ডানে তারপর বামে পানি ঢেলে ধুয়ে নিতে হবে। শেষে একটু সরে গিয়ে দু’পা ধৌত করতে হবে। (সহীহ বুখারী, সহীহ মুসলিম)
পুরুষের দাড়ি ও মাথার চুল ভালভাবে ভিজাতে হবে।
তবে মেয়েদের ক্ষেত্রে একটু সংযোজন করতে হবে।
উম্মে সালমা (রা) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসুল (স) কে প্রশ্ন করলাম, হে আল্লাহ রাসুল! আমি আমার মাথার চুলে শক্ত বেনী বাঁধি। ফরয গোসলের জন্যে আমি তা খুলে ফেলব? রাসুল (স) বললেন না, তুমি মাথার উপরে তিন অঞ্জল পানি ঢালবে, এটাই তোমার জন্য যথেষ্ট। অতঃপর তুমি তোমার সারা শরীরে পানি ঢালবে এবং পবিত্রতা অর্জন করবে। (সহীহ মুসলিম)
এ পদ্ধতিতে ফরয গোসলের পর সালাতের জন্য আবার নতুন করে ওযু করতে হবে না। গোসলই যথেষ্ট, যদি গোসলের মধ্যে ওযু ভঙ্গের কোন কারণ না ঘটে।
(আবু দাঊদ, তিরমিযী, মিশকাত)



            হায়িয বা ঋতুস্রাব ও নিফাসের বিবরণ
মেয়েরা সাবালিকা হলে তাদের জরায়ু হতে প্রতি মাসে নির্দিষ্ট কয়েকদিন স্বাভাবিকভাবে যে রক্তস্রাব হয় তাকে হায়িয বা ঋতুস্রাব বলা হয়। এর নিম্ন ও ঊর্ধ্ব সময়সীমা সহীহ হাদীসে নির্দিষ্ট করে উল্লেখ নেই।
        হায়িয বা ঋতুস্রাব ও নিফাসের হুকুম
হায়িয বা ঋতুস্রাব ও নিফাস অবস্থায় নিম্নলিখিত কাজগুলো নিষিদ্ধঃ
১। নামায পড়া (এ জন্যে পরে কোন ক্বাযা পড়তে হবে না) ২। রোযা রাখা (পরে ক্বাযা করতে হবে) ৩। কা’বা শরীফে তাওয়াফ করা ৪। মসজিদে অবস্থান করা ৫। কুরআন মাজীদ গিলাফবিহীন স্পর্শ করা ৬। স্বামী স্ত্রীর মিলন (সহবাস) ব্যতীত অন্য সব বৈধ।(সহীহ বুখারী, সহীহ মুসলিম)
কুরআন স্পর্শ ছাড়া মুখস্থ পড়া যাবে। (সহীহ বুখারী)
পবিত্র হলে সাথে সাথে নামায পড়া ও রোযা রাখা শুরু করতে হবে।




                তায়াম্মুম করার পদ্ধতি
তায়াম্মুম করার জন্য প্রথমে নিয়্যাত (অন্তরে সংকল্প) করতে হবে। তারপর বিসমিল্লাহ বলে পবিত্র মাটিতে একবার দু’হাত মেরে ঝেড়ে ফেলে সমস্ত মুখমণ্ডল ও কবজি পর্যন্ত দু’হাত মাসাহ করতে হবে। (সহীহ বুখারী, সহীহ মুসলিম)
এটাই তায়াম্মুমের সুন্নাতী নিয়ম।
                তায়াম্মুম ভঙ্গের কারণ
যে সকল কারণে ওযু ভঙ্গ হয় সে সকল কারণে তায়াম্মুম ও ভঙ্গ হয়।

No comments:

Post a Comment

home